ইরানকে স্যালুট জানিয়ে ইসরায়েলের ঘাঁটিতে হুতিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনা
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে হুতি বিদ্রোহীদের এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে। এই হামলা বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে কারণ হুতিরা এই আক্রমণকে ইরানকে স্যালুট জানিয়ে চালিয়েছে। এই ঘটনা ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বকে আরও গভীর করার পাশাপাশি ইয়েমেনের সংঘাতকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে।
### হুতিরা কারা?
হুতিরা মূলত ইয়েমেনের একটি শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত বিদ্রোহী দল, যাদের আনুষ্ঠানিক নাম “আনসারুল্লাহ।” তারা ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ দেশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০১৫ সাল থেকে, ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে হুতিরা। সৌদি জোটের লক্ষ্য হচ্ছে ইয়েমেনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারকে পুনরুদ্ধার করা। হুতিরা ইরানের সমর্থন পেয়ে থাকে এবং ইরান তাদেরকে অস্ত্র, অর্থ ও কৌশলগত সহায়তা দিয়ে আসছে বলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে অভিযোগ করা হয়।
### ইসরায়েলের সাথে সংঘাতের পটভূমি
ইসরায়েল ও হুতিদের মধ্যে সরাসরি কোনো যুদ্ধ না হলেও, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের কারণে হুতিরা এই হামলার মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে। ইরান ও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের সাথে শত্রুতার সম্পর্ক বজায় রেখেছে, এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই শত্রুতা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। ইরান হুতিদের সহযোগিতা করে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি ফ্রন্টলাইন তৈরি করতে চায়।
### হামলার কারণ ও ইরানের ভূমিকা
হুতিদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পেছনে ইরানকে সম্মান জানানোর বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে, ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত উত্তেজনাপূর্ণ। ইরান নিয়মিতভাবে ইসরায়েলের ওপর রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে আসছে। হুতিদের এই হামলা ইরানের কৌশলগত সহযোগিতারই অংশ, যা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। ইরান হুতিদের সহায়তার মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর একটি “প্রক্সি ওয়ার” চালিয়ে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
### ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েল এই হামলাকে তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কিছু সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছে, বিশেষ করে ইরানের বিরুদ্ধে। হুতিদের এই হামলা ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমকে আরও জোরদার করতে পারে এবং ইরানের বিরুদ্ধে নতুন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিতেও পারে।
### আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই হামলার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা নিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনাকে ইরানের আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী নীতির উদাহরণ হিসেবে দেখছে এবং ইরান ও হুতিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বলছে। অন্যদিকে, রাশিয়া ও চীন এই পরিস্থিতিকে পশ্চিমা শক্তির মধ্যপ্রাচ্যে হস্তক্ষেপের ফলাফল বলে মন্তব্য করেছে।
### উপসংহার
হুতিদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করেছে। ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের শত্রুতা এবং ইয়েমেনে হুতিদের অবস্থানের মাধ্যমে এই দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। আগামীতে এই ঘটনার প্রভাব কী হতে পারে, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে এটি স্পষ্ট যে, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।